Science News-বিজ্ঞানের টুকরো খবর

যুদ্ধবিমান রক্ষাকবচের বিচিত্র নিদান – সুজিতকুমার নাহা

স্বজ্ঞাপরিপন্থী (counter-intuitive) ঘটনা, গাণিতিক দৃষ্টান্ত কিংবা বিশেষজ্ঞের অভিমত আমাদের বিমূঢ় করে। আসলে, সাধারণ জ্ঞানের দড়ি নামিয়ে তল না পাওয়াতেই আমরা যাই ভীষণ হকচকিয়ে! আমরা তো কোন্‌ ছার, ব্রিটিশ বায়ুসেনার (Royal Air Force সংক্ষেপে, RAF) তাবড় তাবড় কেষ্টবিষ্টুদেরও আক্কেল গুড়ুম হয়েছিল ‘এক্সপার্ট অপিনিয়ন’ জেনে। সুপ্রিয় পড়ুয়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই নির্ভেজাল, আজব কাহিনিটি পরিজ্ঞাত করার বাসনা নিয়েই আজ কী-বোর্ডে বসেছি অক্ষরবিন্যাস করতে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজেছে বেশ কিছুকাল আগেই। পুরোদমে চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। রয়েল এয়ার ফোর্সের (রএফো) যুদ্ধবিমানগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাচ্ছে জার্মানিতে, মুহুর্মুহু বোমা ফেলছে লক্ষ্যবস্তুর ওপর। প্রতিপক্ষও বসে নেই। বিমান-বিধ্বংসী কামান গর্জে উঠছে প্রতিনিয়ত। কামানের চোখে ধুলো দিয়ে কাজ সেরেই চম্পট দিতে চাইছে ব্রিটিশ বোম্বার, অন্যদিকে নিপুণ দক্ষতায় শত্রুবিমানকে বিদ্ধ করতে চাইছে জর্মন কামান। আকাশে যেন জোরকদমে চলছে চোর-পুলিশ খেলা!

অনাহত বিমানেরা কাজ ফুরুলেই ফুরুৎ করে পাড়ি জমাচ্ছে দেশের দিকে। ‘আহত’ বিমানদের মধ্যে কিছু কিছু প্লেন ক্ষয়ক্ষতি সামলে ফিরে যেতে পারলেও অন্যগুলো আছড়ে পড়ছে মাটিতে। বিমান চালক হয় মৃত্যুবরণ করছে অথবা প্যারাশুটসহ ঝাঁপ দিয়ে বন্দি হচ্ছে শত্রুপক্ষের হাতে। গপ্পোটা সকলেরই পরিচিত তাই বিশদ বর্ণনায় যাচ্ছি না।

আব্রাহাম ওয়াল্ড ছিলেন একজন ডাকসাইটে পরিসংখ্যানবিদ্। কিন্তু এটুকু বললেই তাঁর পুরো পরিচয় দেওয়া হবে না। বুদ্ধিজীবী হলেও যুদ্ধ সম্পর্কিত বিষয়ে তাঁর জ্ঞানগম্যি ছিল প্রশ্নাতীত।

বিমানের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য রএফো কর্তৃপক্ষ আব্রাহাম ওয়াল্ডের পরামর্শ চাইলেন। আব্রাহাম ওয়াল্ড যেন গোলাগুলি খেয়েও ফিরে আসা বোম্বারগুলিকে খুঁটিয়ে দেখে বিমানের কোন্‌ কোন্‌ অংশকে আরও শক্তপোক্ত করা উচিত তা বলেন।

যথাসময়ে ওয়াল্ডের সুপারিশ জমা পড়ল রএফো কর্তৃপক্ষের কাছে। সুপারিশ পড়ে সংস্থার কেষ্টবিষ্টুদের চোখ কপালে উঠল। প্লেনগুলির যে-সব জায়গা গোলাগুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সেখানটা ছেড়ে অক্ষত স্থানগুলোকেই পোক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রএফো অফিসের অন্দরে কানাঘুষো শুরু হল, ওয়াল্ডের মাথাটাই গেছে বিগড়ে ! তা না হলে এমন আজব ‘রেকমেন্ডশন’ কী কোনো স্বাভাবিক মানুষ দিতে পারে ?

সুপ্রিয় পড়ুয়া, আপনারও কী মনে হয় ওয়াল্ড দিয়েছিলেন ভুল পরামর্শ ?

রএফো কিন্তু আব্রাহাম ওয়াল্ডের সুপারিশ অনুসারেই বোম্বারগুলিকে পোক্ত করেছিল। ফল মিলেছিল হাতে হাতে। বোম্বার ধ্বংসের হার কমেছিল অনেকটাই।

আসলে, ওয়াল্ডের যুক্তি ছিল অনেকটা এইরকম। ক্ষতিগ্রস্ত বিমানগুলোর প্রত্যাবর্তন থেকে বোঝা যাচ্ছে , ঐ ঐ জায়গাগুলোয় গুলি লাগলে তা হয়ত মারাত্মক হয় না — চালক ও বিমান উভয়েই কোনক্রমে ফিরে আসার মতন অবস্থায় থাকে। যে বিমানগুলো ভেঙ্গে পড়েছে, সেগুলোর কোথায় গোলা লেগেছে, তা জানা অসম্ভব। কিন্তু এটা মনে করা অসঙ্গত হবে না যে সম্ভবত ওগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্য স্থানগুলোতেই। অতএব অন্য স্থানগুলোকে শক্তপোক্ত করাই হবে সঙ্গত কাজ ! পরের ঘটনাক্রম থেকে দেখা গিয়েছিল, ওয়াল্ডের যুক্তিই ছিল অভ্রান্ত !