Environment-পরিবেশ

প্রকৃতি আমাদের শেখায়, প্রকৃতি আমাদের বাঁচায় – কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

মানুষ আজ অহংকারী। শিক্ষার দৌড়ে সে সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এখন সে নিজের শিক্ষা ব্যবস্থা নিজেই ঠিক করে নেয়। প্রকৃতিকে করে অস্বীকার। অথচ গুহাবাসী মানুষ একদিন প্রকৃতির কাছ থেকেই শিক্ষার প্রথম পাঠ গ্রহণ করেছিল। প্রকৃতির নিয়িমগুলি তখন সে মেনে চলত। পরবর্তীকালে ক্রমে ক্রমে যতই সে শিক্ষিত হয়েছে ততই সে নিয়ম ভাঙার খেলায় মেতে উঠেছে।

শিক্ষা সম্পূর্ণ তখনই হয় যখন তাত্বিক এবং প্রায়োগিক উভয় শিক্ষাই লাভ করা যায়। আমাদের বই-সর্বস্য শিক্ষা শুধু তাত্বিক শিক্ষাই দিতে পারে, প্রায়োগিক শিক্ষা নয়। প্রায়োগিক শিক্ষা পূর্ণ হয় প্রকৃতি শিক্ষায়। এদিক থেকে বিচার করলে আমাদের শিক্ষা অসম্পূর্ণ।

প্রকৃতির কাছে মানুষ শিক্ষা পেতে পারে দু’ভাবে- প্রকৃতির নিজের উপাদান অর্থাৎ, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, গাছ-পালা, আকাশ-বাতাস প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে এবং প্রকৃতির কোলে লালিত-পালিত তারই অপর সন্তান পশু-পাখি-কীট-পতঙ্গের মাধ্যমে। এখন দেখা যাক শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে মানুষ কীভাবে প্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষা পেতে পারে।

ছেলেবেলাতেই আমরা শিখেছি, ‘একবারে না পারিলে দেখ শতবার’। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে রবার্ট ব্রুস ও মাকড়সার কথা। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ব্রুস যখন আশ্রয় নেন এক গুহায়, হতাশা যখন তাঁকে গ্রাস করেছে, তখনই তিনি দেখতে পান মাকড়সাটিকে। পরপর সাতবার চেষ্টার পর আট বারের বার মাকড়সাটি গুহার সিলিং-এ পৌঁছোতে সক্ষম হয়েছিল। এই ঘটনা থেকেই ব্রুস শিক্ষা পেছিলেন যে বার বার চেষ্টা করলে সফলতা এক সময় আসবেই। অধ্যবসায়ের এই শিক্ষা আমরা কীট-পতঙ্গের কাছ থেকেই পেয়ে থাকি। শুধু মানুষের নয়, সমগ্র জীবজগতেরই দৈহিক শক্তির সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু যখন দেখি অতি ক্ষুদ্র আকারের পিঁপড়ে তার দেহের ওজনের চেয়ে প্রায় 52 গুণ বেশি ওজনের কোনো বস্তু নিয়ে দিব্যি চিলাফেরা করছে, অথবা যখন দেখি গুবরে পোকার মত অতি সাধারণ এক পোকা তার শরীরের ওজনের প্রায় 850 গুণ ভারি জিনিস বয়ে নিয়ে যাচ্ছে তখন কি আমরা প্রেরণা পাই না আমাদের দৈহিক শক্তির সীমাবদ্ধতা জয় করার?

দূর দূরান্তে বার্তা প্রেরণের জন্য একসময় আমরা পায়রার সাহায্য নিতাম। সংবাদ প্রেরণের পর প্রাপকের কাছে সংবাদ পৌঁছোনোর ব্যাপারে আমরা একরকম নিশ্চিন্তই থাকতাম। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পায়রাও ডাক হরকরার কাজটি সঠিকভাবেই পালন করত। এমনকী নিজের জীবন বিপন্ন করেও সে সঠিক জায়গায় সংবাদ পৌঁছে দেবার চেষ্টা করত। 1917 সালে এরকমই একটি ঘটনার কথা শোনা যায়। পায়রাটি যখন খবর নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রওনা দেয় তখন ছুটে আসা জার্মানদের এক গুলিতে তার একটি পা উড়ে যায়। শুধু তাই নয়। চিঠির কৌটাটি বুলেটের আঘাতে তার পেটের মধ্যে ঢুকে যায়। গুরুতর আহত পায়রাটি সেই অবস্থায় অতি কষ্টে 9 মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চিঠিটি পৌঁছে দেয় প্রাপকের কাছে। এই কর্তব্যবোধের শিক্ষা পায়রাটি পেয়েছিল কার কাছ থেকে? নিশ্চয় মানুষের কাছ থেকে নয়? মানুষের কর্তব্যবোধ তো এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। বরং মানুষেরই এখন উচিত এইসব পশু-পাখি-কীট-পতঙ্গের কাছ থেকে নতুন করে কর্তব্যবোধের পাঠ গ্রহণ করা।

স্থাপত্য শিল্পে পশু, পাখি এমনকী কীট-পতঙ্গেরাও যে উৎকর্ষের পরিচয় দেয় তা দেখে অবাক হতে হয়। বাবুই পাখিকে বাসা বানানোর জন্য আলাদা করে কোনো প্রযুক্তিবিদ্যা শিখতে হয় না। সহজাত প্রবৃত্তির দ্বারাই সে শিখে নেয় বাসা বানানোর প্রয়োগ কৌশল। শুধু বাবুই পাখি কেন, অন্যান্য অনেক পশু-পাখি এমনকী পিঁপড়েরাও জানে নানা ধরনের সুন্দর সুন্দর বাসা বানানোর প্রযুক্তি। এইসব প্রাণীদের অনেকেই মানুষের আগে পৃথিবীতে এসেছে। গুহাবাসী মানুষ কি এদের কাছ থেকেই বাসা বানানোর প্রেরণা পেয়েছিল?

নির্দিষ্ট উষ্ণতা প্রয়োজন মত ধরে রাখার জন্য আমরা ইনকুবেটর ব্যবহার করি। মনুষ্যজীবনের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে হালে আমরা এই যন্ত্রটি তৈরি করেছি। অথচ অস্ট্রেলিয়ার ম্যালি ফাউল(এক ধরনের মুরগি জাতীয় পাখি) বহুকাল ধরেই এক ধরনের প্রাকৃতিক ইঙ্কুবেটরের সাহেয্যে ডিম ফুটিয়ে আসছে। পুরুষ ম্যালি ফাউলের জড়ো করা ঘাস-জঙ্গল-লতা-পাতার স্তুপের মধ্যে স্ত্রী-পাখিটি ডিম পাড়লে পুরুষ পাখিটি তা বালি দিয়ে ঢেকে দেয়। বালির নীচের উদ্ভিজ্জ কিছুদিন পরে পচে গিয়ে তাপ সৃষ্টি করে। এই তাপই ডিমে তা দেওয়ার কাজটি করে। ম্যালি ফাউলের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে অনেক সময় লাগে। তাই প্রাকৃতিক ইনকুবেটরের তাপ নির্দিষ্ট মাত্রায় আছে কিনা দেখার জন্য পুরুষ পাখিটি মাঝে মাঝে বালির মধ্যে ঠোঁট ঢুকিয়ে পরীক্ষা করে নেয়। প্রয়োজনে কখনো বালি সরিয়ে, কখনো বালির স্তর পুরু করে সে প্রাকৃতিক ইনকুবেটরের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট রাখে। নিঃসন্দেহে এটি এক বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা।

আমাদের দেশে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে যে পদ্ধতিতে গণিত শেখানো হয় তাতে শিশু মনের গাণিতিক বিকাশ কতখানি হয় তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সঠিকভাবে উপস্থাপনার অভাবে বিষয়টি শিশুদের কাছে নীরস হয়ে পড়ে। ফলে বেশিরভাগ শিশুর কাছেই গণিত শিক্ষণ দুরূহ ও ভীতিপ্রদ হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে তাদের অবচেতন মনে বিষয়টির প্রতি বিরাগ জন্মে। অথচ প্রকৃতির সাহায্য নিয়ে যদি বিষয়টি শেখানোর চেষ্টা করা হয় তবে ছোটদের কাছে গণিত শেখাটা বিড়ম্বনার বিষয় হয়ে উঠবে না। গণিতের একটি শাখা ‘জ্যামিতি’। জ্যামিতি-বিষয়ক চিত্রসমূহ প্রকৃতির মধ্যেই খুঁগে পাওয়া যায়। শুধু ফল, ফুল, উদ্ভিদের মধ্যেই নয়, পশু-পাখির মধ্যেও ছড়িয়ে আছে এই চিত্র ভান্ডার। আনারসের গা থেকে ‘ত্রিভুজের’ ধারণা পাওয়া যেতে পারে। এর সারা দেহে যে দাগ(চোখ নামে পরিচিত) থাকে তা ত্রিভুজাকৃতি। নারকেল গাছের পাতা থেকে সমান্তরাল সরলরেখার ধারণা করা আদৌ দুরূহ ব্যাপার নয়। ‘বৃত্তের’ ছবি পাওয়া যায় পূর্ণিমার চাঁদে। তরমুজ আর গোলকের মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়াটা কি খুবই কঠিন কাজ? মোচার অগ্রভাগ থেকে ‘কোণ’, কলাগাছ(থোর) থেকে ‘চোঙ’, নারকেল পাতার কাঠি থেকে ‘সরলরেখা’র ধারণা কি আমরা পেতে পারি না? এরকম আরও বহু উদাহরণ পাওয়া যেতে পারে প্রাকৃতিক ভান্ডারে। অনিসন্ধিৎসু চোখে সেগুলি শুধু খুঁজে নিতে হবে আমাদের। প্রকৃতি শিক্ষার সাথে একাত্ম হয়ে শিশুকে গণিত শেখালে সেই শিক্ষাই হবে প্রকৃত শিক্ষা।

গান গাওয়ার বাসনা বোধহয় সব মানুষেরই থাকে। কিন্তু সবাই গাইতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজনুপযুক্ত প্রশিক্ষণ। গান গাওয়ার জন্য পাখিদের প্রয়োজন হয় না আলাদা কোনো প্রশিক্ষণের। প্রকৃতির কোলে লালিত পালিত এইসব পাখির দল জন্ম থেকেই পায় সুরেলা কন্ঠ। সেই কন্ঠ দিয়ে যে সুর বের হয় তা একেবারে নিঁখুত। যেসব পাখি দেখতে সুন্দর তাদের তালিকায় কোকিলকে স্থান দেওয়া যায় না। কিন্তু বসন্ত ঋতুতে সে যখনপঞ্চম সুরে কুহুতান তোলে তখন তার স্থান হয় আমাদের মনের মণিকোঠায়। অতি বড় গায়কও তখন তার এই সুরেলা কন্ঠের তারিফ না করে পারে না। শোনা যায়, আমাদের সঙ্গীতের সপ্তসুরের উৎপত্তিই নাকি পশু-পাখির কন্ঠ নিঃসৃত শব্দ থেকে।

নাচের ক্ষেত্রেও আমরা প্রকৃতির কাছে শিক্ষার্থী। পেখম মেলে ময়ূর যখন নাচে তখন সেই নাচ আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করে- একথা কি আমরা অস্বীকার করতে পারি? বিজ্ঞানী গোপাল ভট্টাচার্যের লেখা থেকে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের একটি সারসের নৃত্যের কথা আমরা জানতে পারি। সারসটি নাকি বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রাঙ্গণে একটি ফুল নিয়ে প্রতিদিনই নানা ভঙ্গিমায় নাচত। কখনও শুয়ে, কখনও লাফিয়ে, কখনও বা ডানা মেলে চলত তার এই অদ্ভুত নাচ। পাখিদের নানা ধরনের নাচ দেখেই কি আমরা অতীতে নৃত্যকলা শেখার প্রেরণা পেয়েছিলাম?

রঙ আমাদের কার না ভাল লাগে? অঙ্গসজ্জা, গৃহসজ্জা, রূপচর্চা ইত্যাদি সব কছুতেই থাকে রঙের ছোঁয়া। চিত্রকরের ছবি জীবন্ত হয়ে ওঠে কল্পনার আর রঙের সংমিশ্রনে। একাধিক রঙের মিশ্রণে তারা ফুটিয়ে তোলে অতি সূক্ষ্ম পরিবর্তন(shade)। তবুও একটা প্রশ্ন থেকে যায়, সত্যিই কি আমরা আজও পেরেছি প্রকৃতির মত এত রঙের বৈচিত্র আয়ত্ব করতে? তবে কেন আমরা বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি বিচিত্র রঙের প্রজাপতির দিকে? কৃত্রিম ফুল সরিয়ে রেখে কেন আমরা ছুটে যাই প্রাকৃতিক ফুলের আকর্ষণে? পাখির শরীরের পালকের রঙের বৈচিত্র আমরা কি পারি নিঁখুতভাবে আমাদের ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে? আমরা পারি কি রামধনুকে নিঁখুত আঁকতে? প্রাকৃতিক ফুলের কমনীয়তা রঙের প্রলেপে ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে এখনও আমাদের শিখতে হবে অনেক। রঙের খেলায় প্রকৃতির কাছে এখনও আমরা শিক্ষার্থী।

খেলাধূলার ক্ষেত্রেও প্রকৃতি আমাদের শিক্ষাগুরু। হাঁস বা পানকৌড়ির সাঁতার কাটাই হয়তো আমাদের সাঁতার শেখার প্রেরণা জুগিয়েছে। হরিণ, ক্যাঙারু বা কয়ার ফড়িং-এর উলম্ফ দেখেই হয়তো আমরা ক্রীড়াসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি লং-জাম্প, হাই-জাম্প ইত্যাদি ক্রীড়া। হনুমান বা বানরের ঝুলন্ত অবস্থায় গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়ানো বা এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফ দিয়ে যাওয়ার সঙ্গে আমাদের জিম্‌নাস্টিক ক্রীড়ার সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। ইদানিং নৃত্যকলা শুধু ডাঙাতেই হয় না, জলে নৃত্য করার কৌশলও মানুষ আয়ত্ব করেছে। এর প্রেরণা যদি ডলফিনের কাছ থেকে আমরা পেয়ে থাকি তবে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আকাশে ওড়ার বাসনা তো পাখিদের দেখেই হয়েছিল আমাদের? খুঁজলে হয়তো এরকম আরও অনেক উপমা পাওয়া যাবে যা আমাদের আরও অনেক নতুন নতুন ক্রীড়ার খোঁজ দিতে পারে।

পিঁপড়ের কাছে আমাদের শেখার শেষ নেই। ওদের মত শৃঙ্খলাবোধ যদি আমাদের থাকতো তবে আমাদের জীবনের ধারাটাই পাল্টে যেত। একান্নবর্তী পরিবার কি করে রক্ষা করতে হয় তা ওদের কাছে শিক্ষণীয়। এ ব্যাপারে মৌমাছির নামও উল্লেখ করা যেতে পারে। মাথা ঠান্ডা রেখে কি করে বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তার কৌশল এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলির বুদ্ধিতে এল কি করে ভাবলে অবাক লাগে। বর্ষাকালে যখন এদের বাসা জলে ভেসে যায় তখন আত্মরক্ষার প্রয়োজনে এরা একসঙ্গে জড়াজড়ি করে গোল বলের মত দলা পাকিয়ে জলের উপর ভাসতে থাকে। সেই অবস্থায় ভাসতে ভাসতে কোনো উঁচু জায়গা পেলে অথবা জল কমে গেলে আবার এরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। ওদের দেখে, শত্রু-মিত্র ভুলে গিয়ে যৌথভাবে আমরা বিপদের মোকাবিলা করতে পারি না কি?

সব মায়েরাই চায় তাদের সন্তানেরা যেন কোনো বিপদে না পড়ে। ‘প্রকৃতি-মা’ও তাই চায়। তাই তার সন্তানদের সুরক্ষার জন্য সে সবরকম ব্যবস্থা করে রেখেছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বায়ুতে আছে পরিমাণ মত অক্সিজেন। অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রয়োজনীয় অনুপাত ঠিক রাখার জন্য পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হয়েছিল পর্যাপ্ত বনাঞ্চল। নির্বিচারে গাছ কেটে এবং বনাঞ্চল ধ্বংস করে আমরা সেই অনুপাত রক্ষায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছি। পৃথিবীকে বেষ্টন করে থাকা বায়ুতে অবস্থিত ওজোনস্তর ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করছে। পৃথিবীতে ডাঙার চেয়ে জলের পরিমাণ অনেক বেশি। সমুদ্রগুলিতে সঞ্চিত এই বিপুল জলরাশি নষ্ট হয়ে আমাদের অস্তিত্ব যাতে বিপন্ন করে না তোলে সেজন্য প্রাকৃতিক নিয়মেই এতে মেশানো আছে পর্যাপ্ত লবণ। এই জলরাশিরই কিয়দংশ সূর্যের প্রখর তাপে বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে মেঘ সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে সেই মেঘ থেকেই বৃষ্টির আকারে ধরিত্রীর বুকে নেমে আসে সুস্বাদু জলধারা যা আমাদের প্রাণ ধারণের জন্য একান্তই প্রয়োজন।

প্রকৃতির দেওয়া এই ‘রক্ষা কবচ’ রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। প্রকৃতির তৈরি নিয়ম-নীতি মেনে চললে একে রক্ষা করা আদৌ কোনো সমস্যা নয়। মানুষ ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য সন্তানদের নিয়ে প্রকৃতির কোনো মাথাব্যাথা নেই। কারণ তারা প্রকৃতি-জননীর সমস্ত নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। এমনকী অরণ্যের মানুষেরাও এইটুকু বুঝতে পেরেছে যে প্রকৃতির বিপর্যয় মানে নিজেদের বিপর্যয়। এই সহজ সরল সত্যটা বুঝতে পারিনি শুধু আমরা, যারা আধুনিক কৃত্রিম শিক্ষার অহংকারে প্রকৃতির নিয়মগুলিকে মানতে অস্বীকার করি। নিজেদের ভোগলিপ্সা চরিতার্থ করতে গিয়ে প্রকৃতির অঙ্গে অনবরত ‘দূষণ’ নামক ক্ষত সৃষ্টি করে চলেছি। প্রকৃতির সারা অঙ্গে আজ এই ক্ষত।

অবাধ্য সন্তানকে সঠিক পথে আনার জন্য মা যেমন মাঝে মাঝে তাকে শাসন করে, ‘প্রকৃতি-মা’ও তার অবাধ্য সন্তান মানুষকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে শাসন করার চেষ্টা করে। ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ বা ‘ওজোনস্তরের ফুটো’ মানুষেরই অসংযত ক্রিয়াকলাপের ফল। এখনও সাবধান না হলে মানুষ নিজের কবর নিজেই খুঁড়বে। প্রকৃতি চায় না, তার প্রবর্তিত নিয়মগুলি মানুষ প্রতিনিয়ত বদলে দিক। বরং সে চায়, তার নিয়মগুলি মেনে এবং তার সঙ্গে সহযোগিতা করে মানুষ তার ভবিষ্যতের আনন্দময় করে তুলুক।

আর ভুল নয়। প্রকৃতি যে পাঠদানের ব্যবস্থা করে রেখেছে তাকে গ্রহণ করে প্রকৃতি মাকে রক্ষা করার শপথ নিই। আগামী দিনের স্লোগান হোক, ‘প্রকৃতি শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা’।