Astronomy-জ্যোতির্বিজ্ঞান

কোয়াসাই-স্টেলার রেডিও সোর্স (কোয়াসার) – কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

পৃথিবী থেকে বহু বহু দূরে একধরনের তারকাসদৃশ্য উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কর খোঁজ পাওয়া গেছে। এদের বলা হয় ‘কোয়াসাই-স্টেলার রেডিও সোর্স’ (Quasi-Stellar Radio Source), সংক্ষেপে ‘কোয়াসার’।

আমাদের বা আমাদের পড়শী তারাজগতগুলিতে এদের দেখতে পাওয়া যায় না। এরা আছে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে। তাই খালি চোখে এদের দেখতে পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। দেখার জন্য অতি শক্তিশালী বিশাল দূরবিনের সাহায্য নিতে হয়।

কোয়াসার থেকে আগত আলোকরশ্মি, বেতারতরঙ্গ, এক্স-রে এবং অবলোহিত রশ্মি বিশ্লেষণ করে এখনও পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে তা হল এগুলি হল ধুলোর বলয়ে গঠিত দূরবর্তী কোনো তারাজগতের উজ্জ্বল সক্রিয় কেন্দ্রবিশিষ্ট বস্তু। এদের আয়তন একটি তারার চেয়ে অনেক বড়, কিন্তু একটি তারাজগতের থেকে অনেক ছোট। এক একটা কোয়াসারের মধ্যে কয়েক লক্ষ সূর্য ঢুকে যেতে পারে।

মহাকাশে কোয়াসারের উপস্থিতি প্রথম জানা যায় ১৯৬০ সালে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন যে মহাকাশের এমন জায়গা থেকে বেতার-তরঙ্গ নির্গত হচ্ছে যেখানে কোনো নক্ষত্রজাতীয় দৃশ্য আলোর উৎস নেই। এই বেতার-তরঙ্গের উৎস খুঁজতে গিয়েই তাঁরা সুদূর মহাকাশে কোয়াসার নামক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কর অস্তিত্ব টের পান।

পরবর্তীকালে শক্তিশালী দূরবিনের সাহায্যে ওই অঞ্চলগুলিতে তাঁরা দৃশ্য আলোর উৎসর সন্ধান পান। এত দূর থেকে এদের টিমটিমে তারার মতো দ্রখতে লাগলেও প্রকৃতপক্ষে এদের ঔজ্জ্বল্য কোনো বড় তারাজগতের চেয়েও কয়েক শ’ গুণ বেশি হতে পারে। ‘থ্রি সি ৪৮’ নামের কোয়াসারটির আবিষ্কর্তা জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্যানডেজ ম্যাথিউজ।

এই কোয়াসারটির ঔজ্জ্বল্য সূর্যের থেকে লক্ষ কোটি গুণ বেশি। আর থ্রি সি ২৭৩ কোয়াসারটির ঔজ্জ্বল্য আমাদের পড়শী তারাজগৎ অ্যন্ড্রোমিডার থেকে শত গুণ বেশি।

এখনও পর্যন্ত মহাবিশ্বে আবিষ্কৃত জ্যোতিষ্কগুলির মধ্যে কোয়াসারই হল দূরতম ও সবচেয়ে শক্তিসম্পন্ন। এই উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কটি সম্পর্কে এখনও বহু প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানীরা খুঁজে পান নি। তাই কোয়াসার আজও রহস্যে ঘেরা।