জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরার হাত থেকে বাঁচায় বুড়ো গাছ
সমগ্র বিশ্বের সামনে বর্তমানে একটা মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ হল জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন। পরিবেশ দূষণ, উন্নত প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার এবং অস্বাভাবিক হারে অরণ্য নিধনের ফলে সমগ্র বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন চোখে পড়ছে। যার ফলস্বরূপ নেমে আসছে বহু প্রাকৃতিক বিপর্যয়- ঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা, খরা, সুনামি প্রভৃতি। এগুলির মধ্যে খরা প্রতিরোধের জন্য এবং খরা পরবর্তী সময়ে তার মোকাবিলার জন্য বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু চিন্তাভাবনা করছেন। তাঁদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল হিসাবে জানা যাচ্ছে নতুন গাছের চেয়ে ১৫০ বছরের বেশি পুরনো গাছের জঙ্গল পারে জলবায়ু পরিবর্তনের এই মারাত্মক ফলাফলের হাত থেকে মানবসভ্যতাকে বাঁচাতে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পৃথিবীর বুক থেকে এই বুড়ো গাছের জঙ্গল হারিয়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত। কারণ পুরনো গাছের কাঠ খুবই মূল্যবান।, ফলে চোরাশিকারীদের হাত থেকে এদের বাঁচানো হয়ে উঠছে খুবই দুষ্কর। সাধারণ মানুষও সঠিক জ্ঞানের অভাবে নষ্ট করে ফেলছে এই দুর্লভ কার্বন সঞ্চয়ের হাতিয়ারকে। তাই দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক কেন এই বুড়ো গাছ আমাদের প্রয়োজন? কীভাবে এরা আমাদের খরার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে?
যেকোনো উদ্ভিদ পরিবেশের কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিজের মধ্যে সঞ্চয় করে ও অতিপ্রয়োজনীয় অক্সিজেন পরিবেশে নির্গত করে, অর্থাৎ উদ্ভিদ কার্বনের ভাণ্ডার হিসাবে কাজ করে। স্বভাবতই গাছ যত পুরনো হবে, ভাণ্ডার ততই বড় হবে। আর এই ভাণ্ডার শুধুমাত্র পরিবেশকে নির্মল রাখতেই সাহায্য করে তা নয়, এই ভাণ্ডারে সঞ্চিত কার্বনের পরিমাণ কাঠের গুণাগুণ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। বুড়ো গাছের গুঁড়ি কাটলে বেশ কিছু রিং দেখতে পাওয়া যায়- যা ‘কার্বন-রিং’ নামে পরিচিত। যে গাছে যত বেশি রিং তার বয়সও তত বেশি; পাশাপাশি কাঠের গুণাগুণও তত ভালো। ফলে কাঠের চাহিদা মেটাতে পৃথিবীর বুক থেকে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে এই প্রাচীন মহীরুহের দল, পাল্লা দিয়ে খরার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিকে দিকে।
জঙ্গলে বয়স অনুযায়ী প্রধানতঃ তিন ধরণের গাছ পাওয়া যায়- নতুন, মাঝারি ও অনেক প্রাচীন গাছ। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে উদ্ভুত খরার প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব সেই সংক্রান্ত এক পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা দেখেন, খরার সময়ে নবীন গাছগুলিতে প্রায় ২৮% বৃদ্ধি হ্রাস পায়, যেখানে এই হ্রাসের পরিমাণ বুড়ো গাছগুলিতে ২১%। অর্থাৎ নবীন ও প্রবীণ গাছের বৃদ্ধি হ্রাসের মধ্যে প্রায় ৭% পার্থক্য যা বুড়ো গাছগুলির খরার সময়ে নতুন গাছগুলির চেয়ে ভালভাবে টিকে থাকার ইঙ্গিত দেয়। চরম খরার সময়ে এই পার্থক্য ৭% থেকে ১৭%-এ পরিণত হয়। সুতরাং প্রাচীন গাছের অভিযোজন ক্ষমতা খুব স্পষ্টভাবেই এক্ষেত্রে পরিলক্ষ্যিত হয়। শুধু তাই নয়, সমগ্র বিশ্বের সমস্ত উদ্ভিদের হিসাব করলে এই খরা প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রাচীন গাছের কার্বন-ভাণ্ডার বৃদ্ধির ঘটনাকেও নিছক অবহেলা করা যাবেনা। বিশেষত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বন্য উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এটিতো বেশি করে প্রযোজ্য কারণ এই জঙ্গল পৃথিবীর প্রধান কার্বন-ভাণ্ডার হিসাবে কাজ করে।
কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা সমগ্র বিশ্বের সব মহাদেশের প্রায় ২১,৯৬৪টি প্রজাতির বৃক্ষের উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। ১১৯টি খরাপ্রবণ এলাকার সমীক্ষা করা হয়েছে নানাভাবে। তাঁদের এইসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকেই জানা যায়- ১৪০ বছরের কমবয়সী গাছ যদি খরার পরও বেঁচে যায় এবং সুস্থভাবে টিকে থাকে তাহলে তা খুব দ্রুত অভিযোজিত হয় এবং এরকম গাছ পরবর্তীকালে খরা প্রতিরোধের একদম আদর্শ হাতিয়ার হয়ে ওঠে।
বিজ্ঞানীদের অনুমান সুদূর ভবিষ্যতে আমাদের সাজানো পৃথিবীর অনেকাংশই খরার কবলে পড়তে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই কুপ্রভাব থেকে তাই অচিরেই মুক্তির পথ চাই। প্রাচীন বুড়ো গাছ পারে আমাদের খরার হাত থেকে বাঁচাতে, পাশাপাশি পৃথিবীর কার্বনভাণ্ডারকেও সমৃদ্ধ করতে। তাই আমাদের উচিৎ সকল মানুষকে সচেতন করা এবং এই বুড়ো গাছ রক্ষা করা। সরকারি বা নিজস্ব উদ্যোগে বনসৃজন বা বৃক্ষরোপণ হয় ঠিকই, কিন্তু নতুন লাগানো গাছ যে যথেষ্ট নয়, তা কিন্তু জলের মতই পরিষ্কার। ভবিষ্যতে এবিষয়ে আরও গবেষণা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন যা আমাদের সম্পূর্ণ খরামুক্ত পৃথিবীর সন্ধান দিতে পারবে।
তথ্যসূত্রঃ-

ঐন্দ্রিলা সাউ: পেশাদার বিজ্ঞান বিষয়ক কন্টেন্ট রাইটার। Amul কোম্পানি থেকে “বিদ্যাশ্রী” পদকপ্রাপ্ত।
Spot on with this write-up, I honestly think this web site needs a
lot more attention. I’ll probably be back again to read more,
thanks for the info!