Popular Science-জনপ্রিয় বিজ্ঞান

কম্পিউটার ভাইরাস

কম্পিউটারে কাজ করতে পারছি না। কিছু জিনিষ টাইপ করে সেভ (save) করতে গিয়ে দেখলাম ঠিক ঠাক কাজ করল না। ডাউনলোড করা অনেক কিছু মুছে গেছে। বুঝালাম ভাইরাসের আক্রমণ। এখনই ব্যাবস্থা নিতে হবে। সে নয় নেওয়া যাবে।

কম্পিউটার ভাইরাস আদতে এক ধরনের প্রোগ্রাম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের ক্ষতি করে এই প্রোগ্রামগুলো। ভাইরাস কথাটার পুরো নামঃ Vital Information Resource Under Siege। প্রোগ্রামটি নিজে থেকেই এক কম্পিউরার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে যায়।

যে কোন ধরেনের ফ্ল্যাস ড্রাইভের মাধমে। যেমন পেন ড্রাইভ, মেমোরি কার্ড, ইন্টারনেট। এ ছাড়াও আছে চোরাই সফ্টওয়ারগুলো কম্পিউটার ভাইরাসের বড় উৎস। বিস্তারিত জানতে হলে অনেক কথা বলতে হবে। সংক্ষেপে জানাই। কম্পিউটার চলে হার্ডওয়ার এবং সফটওয়ারের সমন্বয়ে। কম্পিউটারটি হার্ডওয়ার দিয়ে চলবার উপযুক্ত করবার পর দরকার হবে অপারেটিং সিস্টেম, মাল্টিমিডিয়া, গ্রাফিক্স, ইউটিলিটি ইত্যাদি সফটওয়ার। এক গাদা সফটওয়্যারের সাহাজ্যেই আমরা কাজ করি। যেমন ছবি আঁকা, হিসেব করা, লেখা ইত্যাদি। কম্পিউটার ভাইরাসও একটি সফটওয়ার। যদিও পার্থক্য আছে।

মাল্টিমিডিয়া, গ্রাফিক্স, ইউটিলিটি সফটওয়ারগুলো আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাবহার করি, অর্থাৎ যার যেমন কাজের দরকার তেমন প্রোগ্রাম ইন্সটল করা হয়। ইন্সটল করলে নির্দেশ অনুযায়ী এটি কাজ করবে। কিন্তু ভাইরাস নামের প্রোগ্রামটি আমার নির্দেশ বা কমান্ড অনুযায়ী কাজ করবেনা। কাজ করবে যিনি প্রোগ্রাম তৈরি করেছেন, তার নির্দেশে। ঐ প্রোগ্রাম রচয়িতা তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এগুলো তৈরি করেছেন। সফটওয়ার ব্যাবহারকারীর অজান্তে নিজে প্রোগ্রাম ইন্সটল হয়ে যায়।

আর তারপর?

তারপর অল্প সময়ে পুরো কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ কব্জায় নিয়ে প্রোগ্রামারের উদ্দেশ্যে পূরণ করতে থাকে। ফলে কি হয়? যিনি কম্পিউটারে কাজ করবেন, তার মস্ত বিপদ। নিজের দরকারি সফটওয়্যার তিনি আর ব্যাবহার করতে পারবেন না।

বর্তমান বিশ্বে তথ্য আদান প্রদানের সবচেয়ে দ্রুত মাধ্যম ইন্টারনেট। লেখা ছবি তথ্য সব কিছুই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজলভ্য। ইন্টারনেটে ভাইরাসও লুকিয়ে থাকে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে হ্যাকাররা অন্যের তথ্য ভাণ্ডারে ঢুকে অনেক কিছু জেনে নিতে পারে। শুধু জানাই নয়, ব্যবহারকারীর সফটওয়্যারে রাখা তথ্য নষ্ট করে দিতে পারে। ব্যাঙ্কের তথ্য এমনকী কোনো দেশের সামরিক তথ্যও চুরি হয়ে যেতে পারে হ্যাকারদের পাল্লায় পড়ে। এ সব গুলোই হয় ভাইরাসের মাধ্যমে।

ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত করা, হ্যাক করে আমার ব্যাঙ্ক বা ট্যাক্স সংক্রান্ত গোপন তথ্য জেনে নেওয়া সম্ভব ওয়েবসাইটে ভাইরাস ঢুকিয়ে দিয়ে। কম্পিউটারে তথ্য সুরক্ষিত রাখতে, প্রতিমুহূর্তে ভাইরাস আক্রমণ ঠেকাতে গোটা বিশ্ব আজ তটস্থ।


ড. সৌমিত্র কুমার চৌধুরী: পূর্বতন বিভাগীয় প্রধান ও এমেরিটাস মেডিক্যাল স্যায়েন্টিস্, চিত্তরঞ্জন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা সংস্থান, কলকাতা।