Free ArticlesPopular Science-জনপ্রিয় বিজ্ঞান

কোভিড-১৯ : মানব সভ্যতা ‘আগুন নিয়ে খেলছে’ না তো?

covid-19-humans-play-with-fire

২০১৯-২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব-অর্থনীতি কার্যত স্থবির অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মানুষ এখন সীমিত রেশনের উপর নির্ভর করে একটি ‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার চেষ্টায় ব্যস্ত। তারা করোনা ভাইরাসের মহামারীটি শেষ হওয়ার প্রত্যাশায় দিন গুনছেন; করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে প্রচুর মানুষের প্রাণহানি ঘটার পরেও সে দেশের মানুষেরা ফিরে যেতে চাইছেন তাদের স্বাভাবিক জীবনে।

প্রত্যাশা থাকা ভালো কিন্তু আমরা কিছু ভুলে যাচ্ছি না তো? সংক্রামক ব্যাধির এই প্রাদুর্ভাব যে আসলে মানুষের কাছে প্রকৃতির পাঠানো একটি সতর্কবার্তা – এই সত্যটি এবার বিবেচনা করার সময় এসে গেছে।

বর্তমানে ঘটে যাওয়া জলবায়ু সংকট এবং বিভিন্ন ভাইরাল রোগের প্রাদুর্ভাবের ফলস্বরূপ ব্যাপক মহামারীর পরিস্থিতি আমাদের কাছে প্রকৃতির এই বার্তাই প্রেরণ করে যে মানব সভ্যতা যে সমস্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ ধংস করে চলেছে তার ক্ষতিকর পরিণতি অতীব ভয়ংকর হতে চলেছে।

গত কয়েক দশক ধরে এও লক্ষ্য করা গেছে যে মানুষের মধ্যে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন এর পিছনে প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণযোগ্য রোগের সম্পর্ক আছে। এই রোগগুলি অনেক সময় মহামারী রূপ ধারণ করে বিপুল সংখ্যক মৃত্যু ডেকে আনতে সক্ষম। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইবোলা (Ebola), বার্ড ফ্লু (bird flu), মার্স (Middle East respiratory syndrome (Mers)), রিফ্ট ভ্যালি জ্বর (Rift Valley fever), সারস (severe acute respiratory syndrome (Sars)), West Nile virus এবং জিকা ভাইরাস (Zika virus) সংক্রমণের ঘটনাগুলি প্রাণী থেকে শুরু করে মানুষের মধ্যে সংক্রমণের ফলেই ঘটেছে।

কিন্তু কীভাবে এই রোগগুলির সংক্রমণ ঘটে?

লক্ষ্য করে দেখা গেছে এই সমস্ত সংক্রামক রোগ সাধারণত চার রকম ভাবে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়েঃ-

১) বন্যজন্তুর সংস্পর্শে এলে: –

কৃষিকাজ, খনন ও আবাসনের জন্যে ভূমি বিস্তারের হেতু বহু বছর ধরেই মানুষ বনভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে চলেছে। এর ফলে অনেক সময়েই বন্যপ্রাণীর সংস্পর্শে এসে যাচ্ছে মানুষ। এবং তাদের দ্বারা বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। চীনে হ্যান্টাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সাম্প্রতিক ঘটনাটি বিবেচনা করুন। এই ভাইরাসটি মূলত বিশেষ এক গোষ্ঠীর ইঁদুরদের আক্রমণ করে ও সংক্রামিত প্রাণীটির (হোস্ট) করা প্রস্রাব, মল এবং লালা প্রবাহিত অ্যারোসোলাইজড ভাইরাস (aerosolized virus)-এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ বলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসকে বলে ‘হ্যান্টাভাইরাস পালমোনারি সিনড্রোম (এইচপিএস)’ (hantavirus pulmonary syndrome (HPS)) এবং এটি মূলত সাইন নম্ব্রে ভাইরাস (Sin Nombre virus) দ্বারা আক্রান্ত ডিয়ার মাউস (deer mouse) এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়।

কিছু পরিসংখ্যান দিই:

১৯৫০-২০০৭ এই সময়কালে, চীনের জনগণের মধ্যে এইচএফআরএসের মোট ১,৫৫৭,৬২২ টি কেস এবং এদের মধ্যে ৪৬,৪২৭ জনের (৩%) মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭ সালের জানুয়ারির পরিসংখ্যা বলছে মোট ৩৬টি রাজ্যে এই ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত কেস হল ৭২৮ সংক্রামক রোগ / অসুস্থতার এমন আরও বেশ কয়েকটি নিদর্শন রয়েছে যা বন্য প্রাণীর সংস্পর্শে আসার কারণেই ঘটেছে। এখানে কিছু উদাহরণ দিই:-

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের West Nile virus-টি সংক্রামিত পাখি এবং মশার সাথে সম্পর্কিত। এই ভাইরাস সংক্রামিত মশার কামড়ের মাধ্যমে পাখির দেহে সংক্রামিত হয়। আবার অন্যদিকে সংক্রামিত পাখিদের কামড়ালে তাদের রক্তপানের মাধ্যমে মশারা সংক্রামিত হয়। এই সংক্রামিত মশা এবার মানুষকে কামড়ালে ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করে। সংক্রামিত পাখির মাংস খেলেও মানুষের দেহে এই ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।

Francisella tularensis হল এমন আরেকটি ব্যাকটিরিয়া যা বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষের শরীরে সংক্রামিত হতে পারে। এটি জুনোটিক এজেন্টের (zoonotic agent) একটি ভাল উদাহরণ। এটি গ্রাম-নেগেটিভ কোকোব্যাসিলাসের (Gram-negative coccobacillus) একটি রোগজীবাণু প্রজাতি, একটি বায়বীয় ব্যাকটিরিয়া। সংক্রমণের প্রধান উত্স ইঁদুর এবং খরগোশ। মৃত পশুর সংস্পর্শে আসা শিকারীদের দেহে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। টিক (এক ধরনের পোকা) বা মশার কামড়ের মাধ্যমেও এই রোগের জীবাণু তাদের শরীরে প্রবেশ করার ঝুঁকি থেকে যায়।

অ্যানথ্রাক্স (B. anthracis or Anthrax) হল আরেক মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা প্রাণীর সংস্পর্শে এলে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে। অ্যানথ্রাক্স মূলত তৃণভোজী প্রাণীদের একটি রোগ (বন্য এবং গার্হস্থ্য উভয়ই)। এই রোগ মানুষের শরীরে দূষিত খাবার (সংক্রামিত প্রাণীর মাংস) খেলে ও দূষিত জল পানের মাধ্যমে ঢোকে। অপরদিকে সংক্রামিত প্রাণীর মাংস যদি মাছি বা শকুন জাতীয় পাখি খায় তাহলে এই রোগের ব্যাকটিরিয়া দ্বারা গঠিত স্পোরগুলি সেই মাছি বা পাখির মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ছড়াতে থাকে। হাওয়ায় ভেসে থাকা এই স্পোরগুলি শ্বাস গ্রহণের মধ্যমেও মানুষের দেহে ঢুকতে পারে। ব্যাকটিরিয়া দ্বারা গঠিত এই স্পোরগুলি ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রকৃতিতে সুপ্ত এবং কার্যকর থাকতে দেখা গেছে।

মারবুর্গ ভাইরাস রোগের (এমভিডি) মতো ইবোলা ভাইরাসও African fruit bats নামক এক আফ্রিকান বাদুড় প্রজাতির (হোস্ট হিসাবে বিবেচিত) থেকে মানবদেহে সংক্রামিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। সুস্থ মানুষের শরীর থেকে নির্গত তরল পদার্থের সঙ্গে ইবোলায় আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শ বা এই রোগে আক্রান্ত মৃত মানুষের শবদেহের সংস্পর্শ এই রোগ সংক্রমণের অন্যতম কারণ।

লন্ডনের জুলজিকাল সোসাইটির অধ্যাপক অ্যান্ড্রু কানিংহাম বলেছেন যে বন্যপ্রাণীজনিত রোগে মানুষের মধ্যে মৃত্যুর হার অনেক বেশি, যেমন দক্ষিণ এশিয়ার বাদুড় থেকে সংক্রামিত ইবোলার জন্য ৫০% এবং নিপা ভাইরাসের ক্ষেত্রে ৬০% -৭৫%। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) আরও বলেছে আজকাল যে সমস্ত নতুন সংক্রামক রোগের দেখা মিলেছে তার ৭৫% অপ্রচলিত বা বন্য প্রাণী থেকে উদ্ভূত হয়েছে।

২) বিরল ও উদ্ভট পশুর মাংস খাদ্য হিসাবে গ্রহণ থেকে:-

মানুষ বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ করতে ভালোবাসে এবং বিরল প্রজাতির পশুর মাংস তো অনেকেরই বিশেষ পছন্দের তালিকায় থাকে। এইসব উদ্ভট পশুর মাংস (exotic animal meat) চীন, ভিয়েতনাম সহ কয়েকটি আফ্রিকান দেশেও বেশ জনপ্রিয়। এই দেশগুলিতে অনেক জায়গায় এইসব প্রাণীর মাংসের বাজারকে সরকারি নির্দেশেই উৎসাহ দিয়ে বসানো হয়েছে। এই বাজারগুলিতে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর মাংসও বিক্রি করা হয়। এই জাতীয় অনেকগুলি বাজার চীনের বিভিন্ন প্রদেশে আছে যা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। এদের wet market বলা হয়। আর এই বাজারগুলিই করোনা ভাইরাসের মতো আরও অনেক ভয়ংকর সংক্রামক ও প্রাণঘাতী রোগের ‘আঁতুর ঘর’ বলে বিজ্ঞানীদের কাছে বিবেচিত।

খাবারের জন্য লালিত এই বুনো প্রাণীগুলিকে অনেক সময় একসাথে খাঁচায় আবদ্ধ করে দূর-দুরান্ত থেকে পরিবহণের মাধ্যমে বাজারে আনা হয়। এই ভাবে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে প্রাণীগুলি প্রচণ্ডরকমের স্ট্রেস-এর শিকার হয় এবং ইমিউনোপ্রেসড হয়ে পরে। স্বল্প পরিসরে নিজেদের থাকার জায়গাটিতেই মল মূত্র ত্যাগ করে তাদের দেহের মধ্যে যে রোগজীবাণু রয়েছে তা ছড়িয়ে দেয়। বাজারে বিপুল সংখ্যক মানুষ যখন এই প্রাণীদের শরীর থেকে নির্গত তরল পদার্থের সংস্পর্শে আসে তখন মানুষের মধ্যে সেই রোগজীবাণু সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

নিচে কিছু বিদেশী বা বিরল প্রাণীর একটি তালিকা দিলাম যা বিরল মাংসের বাজারগুলিতে খাদ্যবস্তু হিসাবে বিক্রি করা হয়ে থাকে: –

  • লামা (Llama), বাইসন (Bison), বিভার (Beaver) ও উটের (Camel) মাংস যা ব্যবহার করা হয় বার্গারে
  • ইমু পাখির মাংস (Emu meat) যা ব্যবহার করা হয় Chipotle Cheddar sausages বানানোর জন্যে
  • রেইনডিয়ার (Reindeer), বুনো শুয়োর (Wild boar) ও ঝুমঝুমি সাপের (Rattlesnake) মাংস যা ব্যবহার করা হয় সসেজ বানানোর জন্যে
  • ববক্যাট (Bobcat), আর্মাডিলোর (Armadillo) মাংস যা ব্যবহার করা হয় স্যুপে
  • ইলাণ্ড প্রজাতির তৃণভোজী এই প্রাণীর মাংস (Eland meat) যা ব্যবহার করা হয় Rib Eye Steak বানানোর জন্যে
  • আলপাকার মাংস (Alpaca meat) যা ব্যবহার করা হয় strip loin বানানোর জন্যে
  • কোয়োটির মাংস (Coyote meat) যা ব্যবহার করা হয় tenderloin বানানোর জন্যে
  • কুমিরের মাংস (Alligator meat) যা ব্যবহার করা হয় Sirloin বানানোর জন্যে
  • এ ছাড়াও Chuker Partridge, Eastern diamond Black Rattlesnake, Turtles, Axis Deer, Guinea Fowl, Guinea pig, Kangaroo, Nilgai Antelope, Iguana, Pangolin এবং আরও অন্যান্য প্রাণীর মাংসও মানুষের সাধারণ খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত।

এইসব বিরল প্রাণীগুলি ছাড়াও আরও এমন কিছু প্রাণীর মাংস মানুষকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করতে দেখা গেছে যা আমরা অনেকেই ভাবতেও পারব না।

উত্তর সুলাওসির (North Sulawesi ) টোমোহান মার্কেটে (Tomohon Market) একটি অনিয়ন্ত্রিত মাংসের বাজার রয়েছে যেখানে কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, বাদুড় এবং বিভিন্ন ধরনের বন্য প্রাণীর মাংস বিক্রি করা হয় যা স্থানীয় লোকেদের কাছে খাদ্য হিসাবে বেশ প্রিয়।
ভিয়েতনামে কুকুরের একটি বাজার রয়েছে যেখানে জীবন্ত কুকুরকে ফুটন্ত জলে ফেলে সিদ্ধ করে রেস্তোঁরাগুলিতে খাওয়া হয়। এই কুকুরগুলির মধ্যে অনেক সময় পোষা কুকুরও থাকে। ভিয়েতনামীরা বিড়ালের মাংস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর মাংস ও পোকামাকড়ও খেয়ে থাকে।

ভারতেও কুকুরের মাংস খাওয়া সরকারিভাবে অবৈধ। তবে সুদূর উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ড রাজ্যে কুকুরের মাংসের ব্যবসার প্রচলন আছে বলে জানা যায়।

৩) বিরল ও উদ্ভট পশুকে পোষ্য হিসাবে ঘরে রাখলে:-

বিরল জাতের প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ এবং কীটপতঙ্গ পোষ্য হিসাবে পালন করা যুগ যুগ ধরে বড়লোকদের ফ্যাশন হিসাবে প্রচলিত। বাকি সমস্ত প্রাণীর মতোই, অপ্রচলিত পোষা প্রাণীরাও এমন রোগজীবাণু বহন করে যা মানুষের মধ্যে সংক্রামক রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে।

এখানে একটি বিরল প্রাণীর তালিকা দিলাম। এদেরকে পোষা প্রাণী হিসাবে ঘরে বা খামারে রাখা হয় এবং তারা যে রোগগুলি ছড়িয়ে দিতে পারে সেগুলি হল:

  • Monkey Pox:- মঙ্কি পক্সের প্রাদুর্ভাব (২০০৩) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন মানুষকে প্রভাবিত করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় (Illinois) রাজ্যে এক পশু ব্যবসায়ীর খামারে prairie dogs নামক এক তৃণভোজী বন্য ইঁদুর শ্রেণীর প্রাণীর কাছাকাছি রাখা আফ্রিকার গাম্বিয়ান ইঁদুরের মধ্যে এই রোগটি ধরা পড়ে। পরে এইসব প্রাণীদের যখন কেউ পোষ্য হিসাবে নেয় তখন তাদের দেহেও সংক্রমণ হয়।
    হার্পিস বি ভাইরাসটি মাকাকে (macaques) নামক এক প্রজাতির বানর থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হতে পারে। এশিয়ার মাকাকে বানরগুলিকে খুব সহজেই পোষ মানানো যায় বলে অনেকেই এই বানর পোষে। তবে এটি প্রমাণিত হয়েছিল যে মাকাকে মারাত্মক ধরনের সংক্রামক রোগ বহন করতে সক্ষম আর এদের মাধ্যমে মানুষের পাশাপাশি বন্যপ্রাণীরাও আক্রান্ত হতে পারে।
  • যারা সরীসৃপ পোষে তাদের মধ্যে সালমোনেলোসিস (Salmonellosis) নামক একটি রোগ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় 74,000 সালমোনেলোসিসের কেস পাওয়া যায়।
  • সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া (Salmonella bacteria), ভাইরাল এবং ছত্রাকজনিত রোগ ( viral and fungal diseases), ত্বকের সংক্রমণও (skin infections) সজারু বা হেজহোগের মাধ্যমে সংক্রমণ হতে পারে।
  • পোষ্টিটোসিস (Psittacosis), সালমনোলা (salmonella), এভিয়ান যক্ষ্মার (avian tuberculosis) মতো সম্ভাব্য মারাত্মক রোগজীবাণু পোষা প্রাণী হিসাবে টিয়া এবং অন্যান্য বিরল প্রজাতির পাখিদের থেকেও হতে পারে।
  • Exotic Newcastle disease (END) ১৯৭০-এর দশকে তুরস্ককে কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছিল। পোষ্য ব্যবসায়ের জন্য পাচার করা দক্ষিণ আমেরিকার তোতাপাখির থেকে এই রোগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসে বলে মনে করা হয়। ফ্লোরিডায় END-র একটি প্রাদুর্ভাবের ফলে ১৯৮০ সালে ৮,000 তোতাপাখি মারা যায়।

৪) খামারের পশুদের থেকে: –

বিশ্বের জনসংখ্যা সর্বদা বৃদ্ধি পাচ্ছে (২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে আনুমানিক হিসাবে ৭.৭ বিলিয়ন)। এত সংখ্যক ক্ষুধার্ত মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্যে মানুষ সবসময়েই কৃষিকাজ ও পশু পালনের মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রীর উত্পাদন বাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে। গরু, ভেড়া, শূকর, মুরগি এবং ছাগল সহ খামারের প্রাণীরাও রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং তা মানুষের দেহে ছড়াতে পারে।

বর্তমানের করোনা ভাইরাসের সমস্যার মূল কারণটি কিন্তু সেই ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে চীনের সরকারের নেওয়া এক অদ্ভূত নীতিকেই ইঙ্গিত করে। সেই সময় চীন সরকার বন্য জীবজন্তুর চাষের এক অস্বাভাবিক কৃষি পরীক্ষা শুরু করেছিল। চীনা কৃষকদের সরকারিভাবে ইঁদুর, সিভেটস, সাপ, বাদুড়, ভালুক, পাঙ্গোলিন এবং অন্যান্য বন্য প্রাণী সংগ্রহ করতে উত্সাহ দেওয়া হয়েছিল। তারা সেই সব প্রাণী বাড়িতে খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করার জন্যে এবং বাণিজ্যিকভাবে বংশবৃদ্ধি করার অনুমতি পায়। তাছাড়া চিরাচরিত চীনা চিকিত্সায় ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্যগুলিতে এই সমস্ত জীবজন্তুর দেহের অংশও যেমন ভালুকের পিত্ত, প্যাঙ্গোলিন গায়ের আঁশ, বাঘের থাবা, ইত্যাদি ব্যবহার করার প্রচলন আছে। রোগ নিরাময়ের এইসব অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও যুগ যুগ ধরে চলে আসা কুসংস্কারগুলিও এই জাতীয় বাণিজ্যকে ব্যাপকভাবে উত্সাহ দিয়েছে। এর ফলও হয়েছে মারাত্মক। কারণ মানুষের এই খাদ্যভ্যাস-এর ফলে জীবন্ত পশুর বাজারগুলি থেকে একাধিক নতুন সংক্রামক রোগের মানবদেহে সংক্রমণ ঘটানোর পথ খুলে দিয়েছে।

সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা দেয় যে আজকের মানবসভ্যতা প্রকৃতপক্ষে ‘আগুন নিয়ে খেলছে’। বন্যপ্রানীদের মধ্যে যে সমস্ত মারাত্মক রোগের অস্তিত্ব রয়েছে, যদি সঠিক উপায়ে লড়াই না করা হয়, তবে, তা একটি জাতির সমগ্র জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম।


সায়ন্তনী ব্যানার্জী: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি। বিজ্ঞাপন ও ডিজিটাল মার্কেটিং পেশায় যুক্ত। কন্টেন্ট রাইটার ও গ্রাফিক ডিজাইনার। পরিবেশ নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।